দেশে খুন, গুম, অপহরণ, অপমৃত্যু ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতির হার দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রতিদিনই ছিনতাই, অপহরণ, খুন ও ডাকাতির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নিজের বসত ঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কোথাও কারো নিরাপত্তা নেই। রাজপথে, হাসপাতালে, নদীতে, ডোবা-নালায় পড়ে থাকছে মানুষের লাশ। এক দিকে আইন-শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ অবনতির দিকে যাচ্ছে দিন দিন, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা, আগ্রাসী মনোভাব, লোভ ও একমুখী স্বার্থপরতা অশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন নিরাপত্তাহীন ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ চলতে থাকলে দেশের সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
রবিবার বিকেলে এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফি বলেন, দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন অনেকটা স্তিমিত থাকলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা যেন দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সেই সাথে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কলহ, আত্মহত্যা, হত্যাকান্ডের ঘটনাবলী বেড়ে চলেছে। এসব ঘটনায় আমাদের সামাজিক অস্থিরতা, মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা এবং নৈতিক অবয় যে বেড়েই চলেছে তা সহজেই অনুমান করা যায় । একটা স্বাধীন দেশে, সভ্য সমাজে এ ধরনের হানাহানি ও মৃত্যুর মিছিল মেনে নেয়া যায় না। বর্তমানে সংবাদপত্রের পাতা খুললেই প্রতিদিন যে হারে খুন, গুন, অগ্নিকান্ড, দূর্ঘটনায় অপমৃত্যুর খবর প্রকাশিত হতে দেখা যায়, তাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। সামান্য স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলে বা তুচ্ছ তর্ক-বিতর্কে খুনাখুনির মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। মানুষের মধ্যে সহিষ্ণুতা কমে গিয়ে প্রতিশোধ পরায়ণতা বেড়ে চলেছে। সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামো যেন ভেঙ্গে পড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে ও মানতে চায় না। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় ও আদর্শিক মূল্যবোধ দেশ ও সমাজ থেকে যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামো ভঙ্গুর হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এসব অপরাধ ও অন্যায় প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও কার্যকর তৎপরতা চোখে পড়ে না। তারা সর্বদাই সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের প্রটোকল এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠেকাতেই ব্যস্ত রয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপ দমনে পুলিশকে যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে পুলিশের এক শ্রেণীর সদস্য ও কর্মকর্তা ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলে লিপ্ত হয়ে পড়ার খবরও পত্রিকায় দেখা যায়। এ কারণেই সারাদেশে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-অপহরণ ও চাঁদাবাজি বেড়ে চলেছে। এ ধরণের নিরাপত্তাহীন পরিবেশের কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও বিনোয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। যা দেশ ও জাতির জন্য কোনভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার এই অবনতি ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশের জন্য শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা নয়, বরং এর দায় চূড়ান্ত বিবেচনায় সরকারও এড়াতে পারবে না। রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীসহ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রায় নিয়োজিত সকল বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালিত হয় জনগণের ট্যাক্সের অর্থে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানই তাদের মূল দায়িত্ব। পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করে, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রার মূল দায়িত্বে সঠিকভাবে ব্যবহার করলেই কেবল পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা চলছে দেশে। আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার অবনতি অর্থনৈতিক মন্দাকে যেমন দীর্ঘায়িত করবে, সেই সাথে জনঅসন্তোষও বাড়িয়ে তুলবে। রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পুঁজি করে পেশাদার অপরাধীরা তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধির সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখে গুম-খুন, অপমৃত্যু রোধ ও আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যথাশীঘ্র কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। এ েেত্র সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ দেখতে চায় জনগণ।
তিনি আরো বলেন, আইনের নিরপেক্ষ কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ থেকে অন্যায় ও অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে নিয়মিত নামায আদায় ও ধর্মীয় শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং নারীদেরকে বাইরে যাওয়ার সময় পর্দা ও শালীনতার সাথে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কারণ, ধর্ম মানুষকে ন্যায় ও ইনসাফের পথে চলতে এবং অন্যায় ও হানাহানি থেকে দূরে রাখতে কঠোরভাবে উদ্বুদ্ধ করে। ধর্ম মানুষকে খুনাখুনি, মদ-গাঁজা, দূর্নীতি ও অপরাধে জড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়। দেশ ও সমাজে ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা বেড়ে গেলে মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা আপনা থেকেই কমে যাবে। তিনি সরকারীভাবে বিভিন্ন মিডিয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম ও নৈতিকতার উপর প্রচারণামূলক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
No comments:
Post a Comment